চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি :
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সনাতন ধর্মাবলম্বী এক মৃতের শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে যাওয়া
লাশবাহী একটি বাসের টোল আদায়কে কেন্দ্র করে মৃতের স্বজনদেরকে বেধড়ক
মারধরের অভিযোগ উঠেছে টোল আদায়কারীদের বিরুদ্ধে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত
হন। আহতদের মধ্যে মৃতের চাচাতো ভাই লালচাঁন চৌধুরী (৫০) কে ২৫০ শয্যা
বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ মে) সন্ধ্যার কিছু আগে মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত বীরশ্রেষ্ঠ
ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর টোল প্লাজায় এই ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে
টোল প্লাজায় ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে মৃতের স্বজনরা। এ সময় প্রায় আধা
ঘন্টা টোল আদায় ও যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে সেতুর উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের
সৃষ্টি হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় দুই টোল আদায়কারীকে আটক করেছে পুলিশ।
আটককৃতরা হলো- শফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সোবহান।
নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ২ নং
ওয়ার্ড হুজরাপুর ঠাকুরবাড়ি এলাকার প্রেমলাল চৌধুরী মঙ্গলবার (৯ মে) বেলা
১১ টায় হার্ট অ্যাটাক করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
অবস্থায় মারা যান। এরপর মরদেহ বাসায় নেয়ার পর বিকেলে স্বজন ও প্রতিবেশীরা
একটি বাসযোগে শিবগঞ্জ উপজেলার তত্তীপুর শ্মশানঘাটে শেষকৃত্য করার জন্য
রওনা দেন। এ সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে টোল প্লাজায় পৌঁছিলে টোল না দিয়ে
যাবার চেষ্টা করলে বাধা দেয় টোল আদায়কারীরা। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে
বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে মৃত প্রেমলালের স্বজনদের রড ও লোহার পাইপ দিয়ে
বেধড়ক পেটায় টোল আদায়কারীরা।
মৃতের মেয়ে মুক্তি চৌধুরী বলেন, হিন্দু ধর্মের লোকজন মরদেহ পোড়াতে
তত্তিপুর শ্মশানঘাট নিয়ে যায়। মাঝেমধ্যে ঝামেলা করলেও সাধারণত লাশের
গাড়িতে টাকা নেয়া হয় না। এরই প্রেক্ষিতে আজ সোমবার আমার স্বজনরা টাকা না
দিয়ে মরদেহ নিয়ে যাবার চেষ্টা করলে বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে লোহার রড ও
পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর করে টোল আদায়কারীরা।
এ বিষয়ে আহত লালচাঁন চৌধুরী জানান, আমরা শুধুমাত্র অনুরোধ করেছি টাকা না
নেয়ার জন্য। এরপরই বিভিন্ন বাজে ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে টোল
আদায়কারীরা। এর প্রতিবাদ করা মাত্রই আদায়কারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে লোহার পাইপ ও
রড দিয়ে আমাদের মারতে থাকে। এ সময় বাকি স্বজন ও স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে
তারা পালিয়ে যায়। বাকিরা লাশের সাথে গেছে। কিন্তু শরীরের বিভিন্নস্থানে
জখম ও আঘাতের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আমাকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ধনঞ্জয় চ্যাটার্জি
বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর এমন হামলা অনাকাংক্ষিত এবং অপ্রত্যাশিত। ঘটনার
খবর পাওয়া মাত্রই আমি ঘটনাস্থলে ছুটে গেছি। এমন হামলার তীব্র নিন্দা ও
প্রতিবাদ জানায়। সেই সাথে আইনশৃংখলা বাহিনীর নিকট এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায়
যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন টোল আদায়কারী জানান, মরদেহের গাড়ির
জন্য কোন ছাড় নেই, এমন কথা বলা মাত্রই তারা বাপ-মা তুলে গালিগালাজ শুরু
করেন। আর এর প্রতিবাদ করা মাত্রই আমাদেরকে মারধর এবং টোল প্লাজায় ব্যাপক
ভাংচুর চালায় নিহতের স্বজনরা।
তবে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের
মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক ফরহাদ আলম বলেন, সেতুর টোল প্লাজায় মারামারির
ঘটনায় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত একজন ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার পা,
মাথা আর হাতে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আরও নিশ্চিত হবার জন্য এক্স-রেসহ
বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেয়া হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন
বলেন, মরদেহবাহী একটি বাসের টোল আদায়কে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে
মারামারি হয়েছে। এ ঘটনায় টোল আদায়কারী দুই জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার
আধাঘন্টার মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে সেতুতে যান চলাচল স্বাভাবিক
করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
Leave a Reply